অনেক আগে সেতু নির্মাণ শেষ হলেও দুই পাশের সংযোগ সড়কের অভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না পাঁচ কোটি টাকার সেতু। পুরনো সেতু ভেঙেছে অনেকদিন আগে। সেই সেতু ভাঙার পরে নৌকা ছিল পারাপারের একমাত্র সম্বল। নতুন সেতু নির্মাণের পওে ভোগান্তি দূর হবার কথা থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। দুই পাশের সংযোগ সড়কের অভাবে হয়নি সাধারণ মানুষের ভোগান্তির সমাধান।
নতুন সেতু ব্যবহার করতে দুই পাশে কাঠের সিঁড়ি তৈরি করেছে সাধারণ মানুষ। যা নিয়ে এখন সাধারণ মানুষকে আরো বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সাধারণ মানুষের দাবি, এত টাকা খরচ করে সেতু নির্মাণ করে যদি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় তাহলে এই সেতু নির্মাণের কোন প্রয়োজন ছিল না। সেতুটি পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার সুটিয়াকাঠী ইউনিয়নে। যা নিয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে স্থানীয় সাধারণ মানুষ।
সংশ্লিষ্ট এলজিডি বলছে, জমি সমস্যার সমাধান না হলে দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব হবে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সুটিয়াকাঠী ইউনিয়নে তারাবুনিয়া খালের উপরে যে পুরনো সেতুটি ছিল সেটি কয়েকদিন আগে ভেঙে পড়েছে। নতুন সেতু তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে চলাচলের একমাত্র সম্বল ছিল নৌকা। নতুন সেতু হওয়ার পরে নৌকায় পারাপারের সমস্যা সমাধানের আশা ছিল কিন্তু নতুন সেতু নির্মাণের পরে করা হয়নি দুইপাশের সংযোগ সড়ক। যার ফলে এত টাকায় নির্মিত সেতু নিয়ে স্থানীয় সাধারণ মানুষকে আবারও নতুন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথকাঠী-বৈঠাকাটা জিসি সড়কে আই.বি.আর.বি প্রকল্পের আওতায় ৪৬ মিটার লম্বা আরসিসি গার্ডার ব্রীজ যৌথ উদ্যোগে নির্মান করে মেসার্স এম এম বিল্ডার্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেসার্স আমির ইঞ্জিনিয়ার্স নামের ২টি প্রতিষ্ঠান। ৫ কোটি ৬২ লক্ষ ২২ হাজার ৭০ টাকা প্রাক্কলিত ব্যায়ে ও ৪ কোটি ৮৪ লক্ষ ৫৪ হাজার ০৬৬ টাকার চুক্তিমূল্যে সেতুটি নির্মিত হয়েছে। যার কাজ শুরু হয়েছে ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারী এবং সমাপ্তির কথা ছিল ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারী। কিন্তু ২ পাশের সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহন ঝামেলায় এখনো সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।
স্থানীয় আক্তারুজ্জামান শেখ বলেন, আমরা পুরনো সেতু ভেঙে যাওয়ার পরে নৌকায় পারাপার করতাম। এখানে নৌকা না থাকলে পারাপার সবার জন্য অন্যতম ভোগান্তির কারণ ছিল। নতুন সেতু করে দুই পাশে সংযোগ সড়ক করেনি। আমরা নিজেরাই সেতু পারাপারের জন্য কাঠের সেতু বানিয়ে নিয়েছি।
স্থানীয় আমিনুল ইসলাম বলেন, কবে যে এই সিঁড়ি সমস্যার সমাধান হবে আমাদের জানায়নি কর্তৃপক্ষ। এত টাকা খরচ করে সেতু নির্মাণ করে আমরা যেনো শান্তিতে পারাপার করতে পারি। সেই ব্যবস্থা দ্রæত করবেন কর্তৃপক্ষ এমনটাই আশা আমাদের।
স্থানীয় লুৎফুন্নাহার খানম বলেন, আমাদের এই সিঁড়ি ব্যবহার করতে অনেক অসুবিধা হয়। বয়স্করা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারেন না। যেকোন সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। সামনে বৃষ্টি আসলে এ নিয়ে ভোগান্তি আরো বাড়বে। নতুন সিঁড়ি বানিয়ে যদি সেতুতে উঠতে হয় তাহলে নৌকাই ভালো ছিল।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ কামাল হোসেন বলেন, তারাবুনিয়া খালের উপরে আগের সেতুটি ভাঙার পরে নতুন সেতুর কাজ করেছে দুইটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেছে, স্থানীয়রা জমি দেয়নি তাই সংযোগ সড়কের কাজ আটকে আছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বলেন, ব্রিজের কাজ তো অনেক আগেই শেষ হয়েছে। দুই পাশে যাদের জমিতে সংযোগ সড়ক পড়েছে তারা জায়গা দিচ্ছে না। তবে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করব, যাতে তারা দ্রæত সময় কাঠের সিড়ির মতো এই মরণ ফাঁদ খুলে বিষয়টির সমাধান করেন।
নেছারাবাদ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হক বলেন, স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে সিঁড়ি তৈরি করে নিয়েছে। এটি আসলেই একটি সমস্যা। আমি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাকে বলেছে স্থানীয়রা জায়গা দেয়ার জন্য টাকা দাবি করছে। তাই তারা কাজ বন্ধ রেখেছে। আমি চেষ্টা করছি যাতে দ্রæত এই ভোগান্তির সমাধান সম্ভব হয়।
নেছারাবাদ উপজেলা প্রকৌশলী তৌফিক আজিজ বলেন, কাঠের সিঁড়ি আমরা করিনি, এ বিষয়ে আমি জানিনা। তবে জমি সংক্রান্ত একটি সমস্যার কারণে দুই পাশের সংযোগ সড়কের কাজ আটকে আছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি জানেন এবং তারা এসে দেখে গেছেন। তাদের সাথে কথা হয়েছে। আশা করছি দ্রæত এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।