পিরোজপুরে খেলার মাঠ থেকে ধরে নিয়ে জোর করে ঐশ্বর্য দাস নামের তৃতীয় শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে কোভিড-১৯ টিকা প্রদান করার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। আজ বুধবার (২৫ জানুয়ারী) সকালে এ বিষয়ে নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা মিতু বেপারী।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মাহাবুব উল্লাহ মজুমদার।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঐশ্বর্য দাস স্বরূপকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী। সে মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারী) দুপুরে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে বিদ্যালয়ে গিয়ে মাঠে খেলছিল। এমন সময় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হাসিনা মমতাজ তাকে পিছন থেকে ধরে নিয়ে যায় শ্রেণিকক্ষে। একজন সেবিকা পরে তাকেসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের কোভিড-১৯ টিকা প্রদান করেন। ঐশ্বর্যর মা নিষেধ করলেও তাকে টিকা দেয়া হয়েছে। বাড়ি ফেরার পথে সেই শিক্ষার্থী অনেকটা অসুস্থতা বোধ করে। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীর মা ফোন দেয় বাবাকে। বাবা বিদ্যালয়ে এসে মেয়েকে ১ম ডোজ না দিয়ে কোভিড-১৯ ২য় ডোজের টিকা দেয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তোপের মুখে পড়েন শিক্ষকের। শিক্ষকরা তাদের বিভিন্নভাবে দূর্ব্যবহার করে বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যেতে বলে। পরে শিক্ষার্থীর মা নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর এ বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন।
ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা মিতু বেপারী বলেন, আমার মেয়ের ১ম ডেজ দেয়া হয়নি। সেখানে ২য় ডোজ দিয়ে তার শরীর-মেধার উপর যে চাপ দেয়া হলো তার কি হবে। সমাধানের জন্য স্কুলে গেছিলাম। সমাধান তো দেয়ই নাই তারা আমাদের সাথে নগন্ন থেকে নগন্নত আচরণ করছে আমাদের সাথে। আজ তারা যে ব্যবহার করছে আমাদের সাথে তাতে আমি মনে করি এর থেকে মৃত্যৃবরন করা ভালো ছিল। একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ব্যবহার যদি এমন হয় তাহলে আমাদের শিশুদের আমরা কোথায় পাঠাই। আমরা কোন দেশে বসবাস করি যেখানে শিক্ষকরা অভিভাবকদের সাথে এমন আচরণ করে। আমাদের ঝাড়ুপেটা করে বের করে দেয়ার কথা বলেছে বিদ্যালয় থেকে। পরে ইউএনও স্যার বরাবর অভিযোগ মৌখিক দিয়েছি। লিখিত অভিযোগটি তাকে পাইনি বিধায় অফিসে জমা দেয়া হয় নাই। সে ৩য় শ্রেণিতে পড়ে। আমার মেয়ের ১ম ডোজ না দিয়ে কোভিড-১৯ ২য় ডোজের টিকা দিয়েছে তারা। এরপর থেকে মেয়ে অসুস্থ। তার জন্য পারিবারিক চিকিৎসক থেকে পরামর্শ নেয়া হচ্ছে। অবস্থার অবনতি হলে মেডিকেলে নিয়ে যাবো।
ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীর পিতা শিক্ষক আশোক দাস বলেন, আমাকে খবর দেয়া হলে আমি বিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমার সাথে শিক্ষকরা বারান্দায় যাওয়ার পরেই খুব খারাপ ব্যাবহার শুরু করছে। তুই-তাহারী ব্যবহার করেছে। প্রধান শিক্ষক লাইব্রেরীতে কিভাবে আসার সাহস পায়। উচ্চসরে বেয়াদবের মতো সে আচরণ করেছে। রেজুলেশনের কথা জানতে চাইলে তারা উল্টাপাল্টা আচরণ করছে আমাদের সাথে। একজন শিক্ষক হয়ে আরেকজন শিক্ষকের সাথে এমন আচরণ আমরা সত্যিই আশা করি না।
অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষিকা হাসিনা মমতাজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জোর করে টিকা দেই নি। পাশের ছিলেন অভিভাবক। আগামী ১/২ তারিখ ক্রীড়া প্রতিযোগীতা। সেখানে প্রশিক্ষণ চলছিল। মাইকে বলার পরও তারা টিকা দিতে গেছে। সে বলেনাই ১ম ডোজ দেয়া না। তাকে ৩ মাস পরে আবারো টিকা নিতে বলা হয়েছে। ভূল তো একটা হয়েছে। আমাদের দায়ী করলে করতে পারেন। তবে বিষয়টি ভূল বোঝাবুঝি। আমাদের ব্যবহার খারাপ না কারন অনেকেই দুর থেকে আমাদের বিদ্যালয়ে পড়তে আসেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একই বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, বেশিরভাগ অভিভাবকদের সাথে শিক্ষকরা জঘন্য আচরণ করে। আমরা মুখ খুললেই আমার বাচ্চাটার সাথে ওরা খারাপ করবে। এই ভয়ে কেউ সামনে অভিযোগ করে না। ওরা আমাদেরকে মানুষই মনে করে না। ওরা এতো বাড়-বাাড়ছে ওদের একটু দমন হওয়া দরকার। আমরা নাকি সচেতন না এমন অভিযোগও তাদের।
স্বরূপকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল হক বলেন, শিশুটিকে টিকা দেয়ার সময় অভিভাবক সাথে ছিল। তখন সে কোন কথা বলেনি। পরে বাড়ি চলে গিয়েছেন। আমি বিদ্যালয়ের ক্রীড়ানুষ্ঠান নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম। পরে অভিভাবকরা বাড়ি থেকে ফিরে এসে শিক্ষক কাউন্সিল সভায় কথা বলেন। তাদের সাথে কথাবার্তার এক পর্যায়ে শিক্ষকদের সাথে কথাকাটিকাটির সৃষ্টি হয়। শুনেছি তারা অভিযোগ দিয়েছেন। বাকিসব জানতে বিদ্যালয়ে আসেন আপনারা।
নেছারাবাদ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: ইলিয়াস বলেন, আমি বিষয়টি অবগত। অফিসে এসে তারা আমাদের মৌখিক জানিয়েছে। লিখিত অভিযোগ দিলে বিভাগীয় ব্যাবস্থার জন্য উদ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে চিঠি দিবো। ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করবে তদন্ত কমিটি। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ কমিটিকে বলে দিবো শিক্ষকরা যাতে অভিভাবদের সাথে খারাপ কোন ব্যাবহার না করেন।
নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মাহাবুব উল্লাহ মজুমদার বলেন, ভূক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ শুনেছি। অভিযুক্ত বলেছেন তার সাথে শিক্ষকরা খুব খারাপ ব্যবহার করেছে। বিস্তারিত জানার জন্য আমি প্রধান শিক্ষককে ডেকেছি। ২ পক্ষকে নিয়ে বসে সমাধানের চেষ্টা করবো। তবে মনে হয়ছে এটি একটি ভূলবোঝাবুঝি। টিকা দিলে একটু জ্বর আসতে পারে। শিক্ষকরা বলেছেন তারা জানতেন না সে ১ম ডোজ নেয়নি। তবে অভিযোগটি আসলেই দু:খজনক। এমনটি আমরা আশা করি না কখনোই।